
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম অন্য যেকোন দুই রাকাত নফল নামাজের মতই। সালাতুল হাজত অর্থ প্রয়োজন পূরণের নামাজ বা আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্যের নামাজ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেকোন প্রয়োজনের সময় এই নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের এই নামাজ পড়তে বলতেন। এই পড়ার সময় শুধু এই নিয়ম করতে হয় যে আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত করলাম। সালাতুল হাজত নামাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট সূরা নেই। অন্য সকল নফল নামাজ যেমন যেকোন সূরা দিয়ে পড়া যায়, সালাতুল হাজতও যেকোন সূরা দিয়ে পড়া যায়। সালাতুল হাজত নামাজ যেকোন সময় পড়া যায়, এর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। যে সময় নামাজ পড়া মাকরুহ সে সময় সালাতুল হাজত নামাজ পড়া যাবে না। সালাতুল হাজত দুই রাকত বা চার রাকাত পড়া যায়।
কেন সালাতুল হাজত নামাজ পড়বেন
শারীরিক-মানসিক যেকোন দুশ্চিন্তায় এই নামাজ পড়তে হয়। যেকোন সমস্যায় পড়লে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনার সমস্যার সমাধান করে দিবেন বা কোন সমাধানের পথ বের করে দিবেন।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত
নিয়ত মানে হলো এরাদা করা বা ইচ্ছা করা। মুখে উচ্চারণ করে এবং আরবিতে নিয়ত করতে হবে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত এভাবে করবেন “আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ পড়তেছি” আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধবেন।
সালাতুল হাজত নামাজের সূরা
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট সূরা নেই। যেকোন সূরা দিয়ে এই নামাজ পড়া যায়। প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে তারপর কোরআন শরীফের যেকোন স্থান থেকে তিন আয়াত পড়লেই হবে বা যেকোন একটি সূরা পড়লেই হবে।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম এবার বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। প্রথমে সুন্দর করে ওজু করে নিবেন, সাথে মেসওয়াক করে নিলে ভালো হয়। মেসওয়াক করে দুই রাকাত নামাজ বিনা মেসওয়াকের সত্তর রাকাত নামাজ থেকে উত্তম। তাই পারলে মেসওয়াক করে নিবেন। তারপর জায়নামাজে কেবলামুখি হয়ে দাড়িয়ে নিয়ত করতে হবে, “আমি কেবলামুখি হয়ে দুই রাকাত সালাতুল হাজতের নফল নামাজ পড়তেছি” আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধতে হবে।
* হাত বাধার পর সানা পড়তে হবে এবং আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
* সূরা ফাতিহার পর যেকোন একটি সূরা পড়তে হবে।
* সূরা শেষ করে রুকু সিজদা করতে হবে এবং দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যেতে হবে।
* দ্বিতীয় রাকাতে আবার বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং যেকোন একটি সূরা পড়তে হবে।
* সূরা শেষ করে রুকু সিজদা করতে হবে এবং তাশাহুদ, দুরূদ, দোয়া মাসুরা শেষ করে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’বলে নামাজ শেষ করতে হবে।
এভাবে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ শেষ করতে হবে। যদি চার রাকাত পড়তে চান তাহলে উপরুক্ত নিয়মে আরও দুই রাকাত পড়ে নিবেন। নফল নামাজ দুই রাকাত করে পড়া উত্তম। তাই দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত পড়ে নিবেন।
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করবে এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে। প্রথমে আরবিতে দোয়া করবেন (আরবিতে দোয়া না পারলে বাংলাতে দোয়া করবেন), তারপর বাংলাতে নিজের প্রয়োজনের কথাগুলো আল্লাহ তায়ালার নিকট বলবেন।
“নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহর নিকট অথবা তার কোন মাখলুকের নিকট কারো কোন প্রয়োজন থাকলে, সে যেন অজু করে দু রাকাত নামাজ পড়ে।” এরপর এ দোয়া পাঠ করে।
সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া আরবিতে
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। আছআলুকা মু’জিবাতি রহমাতিকা অয়া আযা- ইমা মাগফিরাতিকা অয়াল গনিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ অয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদা’লানা- যাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু অয়ালা হাজাতান হিয়া লাকা রিযান ইল্লা কযাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমিন।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি ধৈর্য্যশীল ও মহামহিম। মহান আরশের মালিক আল্লাহ তা’আলা খুবই পবিত্র। সকল প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য। (হে আল্লাহ!) আমি তোমার নিকট তোমার রহমত লাভের উপায়সমূহ, তোমার ক্ষমা লাভের কঠিন ওয়াদা, প্রত্যেক ভাল কাজের ঐশ্বর্য্য এবং সকল খারাপ কাজ হতে নিরাপত্তা চাইছি।
হে মহা অনুগ্রহকারী! আমার প্রতিটি অপরাধ ক্ষমা কর, আমার প্রতিটি দুশ্চিন্তা দূর করে দাও এবং যে প্রয়োজন ও চাহিদা তোমার সন্তোষ লাভের কারণ হয় তা পরিপূর্ণ করে দাও। (জামে তিরমিজি ৪৭৯)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য যা চাওয়ার আছে তা প্রার্থনা করবে। কারণ তা আল্লাহ্ই নির্ধারিত করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বারঃ ১৩৮৪)
উপরুক্ত দোয়াটি পড়তে হবে এরকমটি না। আপনি যে কোন দোয়া মুনাজাতে পড়তে পারবেন এবং বাংলাতে নিজের প্রয়োজনের কথা বলে বলে দোয়া করতে পারবেন। তবে দোয়া কবুল হওয়ার একটি প্রধান শর্ত হলো একিন বা আস্থার সাথে দোয়া করা যে, আল্লাহ অতিশয় দয়ালু তিনি আমার দোয়া কবুল করবেন। কেউ যদি মনে করে যে আমার দোয়া কবুল হবে না, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তার দোয়া কবুল হবে না। এই জন্য দোয়া করার সময় একিনের সাথে দোয়া করা এবং দোয়ার শেষে ধৈর্য্য ধারণ করা।
আরও পড়ুন: কসর নামাজের নিয়ম, মেয়েদের কসর নামাজ, কসর নামাজের বিধান