এশার নামাজ কয় রাকাত এবং এশার নামাজের রাকাতগুলো কি কি আজকের পোস্টে আমরা তা নিয়ে আলোচনা করব। এশার নামাজের নিয়ম এবং এশার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়? এশার নামাজের সময় কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়? কোরআন ও হাদিসের আলোকে এশার নামাজের ফাজায়েল। অনেকেই এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা, পাড়ার নিয়ম, রাত কয়টা পর্যন্ত সময় থাকে এসব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজ হলো পঞ্চম ও সর্বশেষ ওয়াক্তের নামাজ। মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হলেই এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। অনেকে এশার নামাজের রাকাতগুলো বিভিন্নভাবে উল্লেখ করে থাকেন, ফলে কোনটাযে সঠিক তা নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আজকে সকল দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান হবে এই পোস্টটি পড়লে।
এশার নামাজ কয় রাকাত
কারো মতে এশার নামাজ ১৭ রাকাত।
কারো মতে এশার নামাজ ১৫ রাকাত।
কারো মতে এশার নামাজ ৯ রাকাত।
কারো মতে এশার নামাজ ৬ রাকাত।
এতসব মতের মধ্যে সঠিক কোনটি তা আপনাদের নিকট ব্যাখ্যা করবো এবং অন্যান্যদের মতেরও ব্যাখ্যা করবো ইনশাআল্লাহ।
এশার নামাজ ১৭ রাকাত কিভাবে?
১) ৪ রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা (যা পড়লে সওয়াব, না পড়লে গুনাহ নেই)।
২) ৪ রাকাত ফরজ (যা অবশ্যই পড়তে হবে, না পড়লে কবিরা গুনাহ হবে)।
৩) ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (যা পড়তে হবে, ওজর ছাড়া না পড়লে গুনাহ হবে)।
৪) ২ রাকাত নফল (যা পড়লে সওয়াব, না পড়লে গুনাহ নেই)।
৫) ৫ রাকাত বিতর (এটি ওয়াজিব, যা ফরজের সমতুল্য। কমে ৩ রাকাত অবশ্যই পড়তে হবে। না পড়লে গুনাহ হবে)।
এই হলো মোট ১৭ রাকাত।
এশার নামাজ ১৫ রাকাত কিভাবে হয়?
১) ৪ রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা (যা পড়লে সওয়াব, না পড়লে গুনাহ নেই)।
২) ৪ রাকাত ফরজ (যা অবশ্যই পড়তে হবে, না পড়লে কবিরা গুনাহ হবে)।
৩) ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (যা পড়তে হবে, ওজর ছাড়া না পড়লে গুনাহ হবে)।
৪) ২ রাকাত নফল (যা পড়লে সওয়াব, না পড়লে গুনাহ নেই)।
৫) ৩ রাকাত বিতর (এটি ওয়াজিব, যা ফরজের সমতুল্য। তাই অবশ্যই পড়তে হবে। না পড়লে গুনাহ হবে)।
এই হলো মোট ১৫ রাকাত এর ব্যাখ্যা।
যারা বলে এশার নামাজ ৯ রাকাত তাদের ব্যাখ্যা
১) ৪ রাকাত ফরজ (যা অবশ্যই পড়তে হবে, না পড়লে কবিরা গুনাহ হবে)।
২) ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (যা পড়তে হবে, ওজর ছাড়া না পড়লে গুনাহ হবে)।
৩) ৩ রাকাত বিতর (এটি ওয়াজিব, যা ফরজের সমতুল্য। তাই অবশ্যই পড়তে হবে। না পড়লে গুনাহ হবে)।
এই হলো মোট ৯ রাকাত এশার নামাজ।
এশার নামাজ ৬ রাকাতের ব্যাখ্যা
১) ৪ রাকাত ফরজ (যা অবশ্যই পড়তে হবে, না পড়লে কবিরা গুনাহ হবে)।
২) ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (যা পড়তে হবে, ওজর ছাড়া না পড়লে গুনাহ হবে)।
এই হলো মোট ৬ রাকাত। তাদের মতে বিতর ৩ রাকাত এটা আলাদা নামাজ। এটা এশার নামাজের অন্তরভূক্ত নয়। বিতর নামাজ আলাদা ধরা হোক বা এশার সাথে ধরা হোক, বিতর নামাজ পড়তেই হবে। নাহয় কবিরা গুনাহ হবে।
এশার নামাজ কমপক্ষে ৯ রাকাত পড়তে হবে। ৪ রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, তিন রাকাত বিতর।
এশার নামাজের নিয়ম
এশার নাজামের প্রথম চার রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা পড়ার নিয়ম
১) প্রথমে ওজু করে পাক-পবিত্র হয়ে, পবিত্র স্থানে দাড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে (মুখে উচ্চারণ করে বলবেন বা মনে মনে এই নিয়ত করবেন যে, আমি কেবলামুখী হয়ে এশার চার রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতেছি, এতটুকুতেই চলবে, আরবিতে বলা জরুরী নয়)।
২) তারপর দুই হাত কানের লতি বরাবর (মেয়েরা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে) উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে নাভির নিচে (মেয়েরা বুকের উপর) হাত বাধবে এবং বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে।
৩) এবার ছানা পড়তে হবে (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।
৪) তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
৫) সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোন একটি সূরা পাঠ করতে হবে বা কোরআন শরিফের যেকোন স্থান হতে কমপক্ষে ৩ আয়াত পড়তে হবে।
৬) তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবি পড়বে, “সুবহানা রব্বিয়াল আযিম” তিন বার, পাঁচবা, সাতবার যতবার ইচ্ছে। তবে বেজোড় সংখ্যা পড়লে উত্তম।
৭) রুকু হতে উঠার সময় পড়বে “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” এবং সুজা হয়ে দাড়িয়ে পড়বে “রব্বানা লাকাল হামদ”।
৮) দাড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবি পড়বে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” তিন, পাঁচ অথবা সাতবার।
৯) এক সিজদা দেয়ার পর সোজা হয়ে বসে আবার দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। আবার তিন, পাঁচ অথবা সাতবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” পড়তে হবে।
১০) এবার আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
১১। এবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর তার সাথে আরেকটি সূরা পড়তে হবে (প্রথম রাকাতের নেয় ছানা পড়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম রাকাতেই শুধু ছানা পরতে হয়, অন্য রাকাতগুলোতে ছানা পরতে হয় না)। এখন আগের নিয়মে রুকু ও সিজদার নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। দুই সিজদা করার পর বসতে হবে এবং তাশাহুদ পড়তে হবে।
তাশাহুদ: আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামুয়ালাইকা আয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। আসসালামুয়ালাইনা আ’লা ইবাদিল্লাহিস সয়ালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহ্”।
১২। তাশাহুদ শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যেতে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। তারপর রুকু সেজদার নিয়মগুলো আগের মত করতে হবে এবং দুই সেজদার পর আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যেতে হবে।
১৩। চতুর্থ রাকাত শুরু হলো। এখন আবার সূরা ফাতিহা পড়ার পরে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে এবং আগের নিয়মে রুকু করতে হবে এবং দুটি সিজদা করতে হবে।
১৪। দুই সিজদার পরে বসতে হবে এবং তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।
দুরুদ: “আল্লাহুম্মা সল্লিয়ালা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নিকা হামিদুম্মাজিদ।”
দোয়া মাসুরা: “আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্ জুনুবা, ইল্লা আংতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম, মিন ইংদিকা ওয়ার হামনী, ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহীম।”
১৫। তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা শেষ করে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান কাঁধের দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে বাম কাঁধের দিকে সালাম ফিরাতে হবে। এভাবে চার রাকাত সুন্নাত নামাজ শেষ হবে।
এশার নাজামের চার রাকাত ফরজ পড়ার নিয়ম
১। এশার সুন্নাত নামাজের নেয় কেবলামুখী হয়ে (মুখে উচ্চারণ করে বলবেন বা মনে মনে এই নিয়ত করবেন যে, আমি কেবলামুখী হয়ে এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতেছি, এতটুকুতেই চলবে, আরবিতে বলা জরুরী নয়)।
২। তারপর দুই হাত কানের লতি বরাবর (মেয়েরা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে) উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে নাভির নিচে (মেয়েরা বুকের উপর) হাত বাধবে এবং বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে।
৩। এবার ছানা পড়তে হবে (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক।)
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।
৪। তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
৫। সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোন একটি সূরা পাঠ করতে হবে বা কোরআন শরিফের যেকোন স্থান হতে কমপক্ষে ৩ আয়াত পড়তে হবে।
৬। তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবি পড়তে হবে, “সুবহানা রব্বিয়াল আযিম” তিন বার, পাঁচবা, সাতবার যতবার ইচ্ছে। তবে বেজোড় সংখ্যা পড়লে উত্তম।
৭। রুকু হতে উঠার সময় “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলতে হবে এবং সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়তে হয় “রব্বানা লাকাল হামদ”।
৮। দাড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবি “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” তিন, পাঁচ অথবা সাতবার পড়তে হবে।
৯। এক সিজদা দেয়ার পর সোজা হয়ে বসে আবার দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। আবার তিন, পাঁচ অথবা সাতবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” পড়বেন।
১০। এবার আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
১১। এবার দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং তার সাথে আরেকটি সূরা পড়বেন এবং আগের নেয় রুকু এবং দুই সিজদা করার পরে বসে তাশাহুদ পড়বেন।
১২। তাশাহুদ শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবেন এবং শুধু সূরা ফাতিহা পড়বেন। সূরা ফাতিহা পড়ার পর রুকু ও দুই সিজদা করবেন (ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা পড়তে হয় না)। দুই সিজদারপর চতুর্থ রাকাতের জন্য আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যাবেন।
১৩। এভাবে চতুর্থ রাকাতেও তৃতীয় রাকাতের নেয় শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে রুকু ও দুই সিজদা করে বসতে হবে। বসা অবস্থায় তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবেন। চার রাকাত এশার ফরজ নামাজ এভাবে শেষ করতে হবে।
এশার নাজামের দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়ার নিয়ম
১। কেবলামুখী হয়ে (মুখে উচ্চারণ করে বলবেন বা মনে মনে এই নিয়ত করবেন যে, আমি কেবলামুখী হয়ে এশার দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নামাজ আদায় করতেছি)
২। তারপর দুই হাত কানের লতি বরাবর (মেয়েরা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে) উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে নাভির নিচে (মেয়েরা বুকের উপর) হাত বাধতে হবে এবং বাম হাতের উপর ডান হাত বাধতে হবে।
৩। এবার ছানা পড়তে হবে।
৪। তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
৫। সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোন একটি সূরা পাঠ করবেন।
৬। তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবি পড়বেন, তিন বার, পাঁচবা, সাতবার যতবার ইচ্ছে। তবে বেজোড় সংখ্যা পড়লে উত্তম।
৭। রুকু হতে উঠার সময় পড়বেন “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” এবং সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়বেন “রব্বানা লাকাল হামদ”।
৮। দাড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবি পড়বেন তিন, পাঁচ অথবা সাতবার।
৯। এক সিজদা দেয়ার পর সোজা হয়ে বসে আবার দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। আবার তিন, পাঁচ অথবা সাতবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” পড়বেন।
১০। এবার আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যাবেন। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
১১। এবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং তার সাথে আরেকটি সূরা পড়বেন এবং আগের নেয় রুকু এবং দুই সিজদা করে বসতে হবে।
১২। এখন তাশাহুদ, দুরুদ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। তারপর দুইদিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।
তিন রাকাত বিতর পড়ার নিয়ম
১) কেবলামুখী হয়ে (মুখে উচ্চারণ করে বলবেন বা মনে মনে এই নিয়ত করবেন যে, আমি কেবলামুখী হয়ে তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতেছি)
২) তারপর দুই হাত কানের লতি বরাবর (মেয়েরা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে) উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে নাভির নিচে (মেয়েরা বুকের উপর) হাত বাধতে হবে এবং বাম হাতের উপর ডান হাত বাধবেন।
৩) এবার ছানা পড়তে হবে।
৪) তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
৫) সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোন একটি সূরা পাঠ করতে হবে।
৬) তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবি পড়বেন, তিন বার, পাঁচবার, সাতবার যতবার ইচ্ছে। তবে বেজোড় সংখ্যা পড়লে উত্তম।
৭) রুকু হতে উঠার সময় পড়বেন “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” এবং সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়বেন “রব্বানা লাকাল হামদ”।
৮) দাড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবি পড়বেন তিন, পাঁচ অথবা সাতবার।
৯) এক সিজদা দেয়ার পর সোজা হয়ে বসে আবার দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। আবার তিন, পাঁচ অথবা সাতবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” পড়বেন।
১০) এবার আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যাবেন। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
১১) এবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং তার সাথে আরেকটি সূরা পড়বেন এবং আগের নেয় রুকু এবং দুই সিজদা করে বসে তাশাহুদ পড়তে হবে।
১২) তাশাহুদ পড়ে আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যাবেন।
১৩) এখন তৃতীয় রাকাতে দাড়িয়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং তার সাথে আরেকটি সূরা পড়তে হবে এবং দাড়ানো অবস্থাতেই হাত ছেড়ে দিতে হবে। আবার আল্লাহু আকবার বলে হাত কানের লতি বরাবর উঠাতে হবে (মেয়েরা কাঁধ বরাবর উঠাবে) এবং নাভির নিচে (মেয়েরা বুকের উপর) হাত বাধবে এবং বাম হাতের উপর ডান হাত বাধতে হবে।
১৪) এবার এই দাড়ানো অবস্থাতেই দোয়া কুনুত পড়তে হবে।
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তায়ীনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, অলা- নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক।
দোয়া কুনুতের বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমার ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমার দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমার দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমার রহমতের আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই নির্ধারিত।
১৫) দোয়া কুনুত শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে এবং রুকুর তাসবি পড়তে হবে। রুকু থেকে উঠে সিজদায় যেতে হবে।
১৬) দুই সিজদা শেষ করে তাশাহুদ, দুরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়েতে হবে এবং সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
এশার নামাজের সময় শুরু ও শেষ সময়
মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হলেই এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর ফজর নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এশার নামাজের ওয়াক্ত থাকে, অর্থাৎ সুবেহ সাদিকের আগ পর্যন্ত এশার নামাজ পড়া যাবে। তবে ১২টার আগে এশার নামাজ শেষ করা উত্তম।
এশার নামাজের ফজিলত
➤ আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় নামাজ নির্লজ্জ ও ফায়েশা কাজ হতে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত, আয়াত-৫৪)
➤ আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, নিশ্চয় যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করে, আর নামাজের পাবন্দী করে এবং যাকাত আদায় করে তাদের রবের নিকট তাদের সওয়াব সংরক্ষিত রয়েছে। আর না তাদের কোন আশংকা থাকবে এবং না তারা চিন্তিত হবে। (সূরা বাকারাহ, আয়াত- ২৭৭)
➤ আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, সূর্য ঢলে যাওয়ার পর হতে রাত্রি অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া পর্যন্ত নামজগুলো আদায় করতে থাকুন (অর্থাৎ জোহর, আছর, মাগরিব, এশা)। আর ফজরের নামাজও আদায় করতে থাকুন, নিশ্চয় ফজরের নামাজ (আমল লেখার কাজে নিয়োজিত) ফেরেশতাদের উপস্থিতির সময়। (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৭৮)
➤ হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই এরশাদ করতে শুনেছি যে, এশার নামায যে জামাতের সাথে পড়ে সে যেন অর্ধরাত্রি এবাদত করল, আর যে ফজরের নামাযও জামাতের সাথে পড়ে লয় সে যেন সারারাত্র এবাদত করল। (মুসলিম)
➤ হযরত আবু হোরায়রা (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, অন্ধকারে অধিক পরিমাণে মসজিদে যাতায়াতকারী লোকেরাই আল্লাহ তায়ালার রহমতের ভিতর ডুবদানকারী। (ইবনে মাজাহ, তারগীব)
➤ হযরত বুরাইদাহ (রাযিঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যারা অন্ধকারে অধিক পরিমাণে মসজিদে যাতায়াত করে তাদেরকে কেয়ামতের দিন পূর্ণ নূরের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। (আবু দাউদ)
➤ হযরত আবু হোরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যদি দ্বিপ্রহরের গরমে জোহরের নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়ার ফযীলত লোকেরা জানত তবে জোহরের নামাযের জন্য দৌড়িয়ে যেত। আর যদি তাহারা এশা ও ফজরের নামাযের ফযীলত জানত তবে (অসুস্থতার দরুন) হামাগুড়ি দিয়া হলেও এই নামাযের জন্য মসজিদে যেত। (বোখারী)
➤ হযরত আবু হোরায়রা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মুনাফিকদের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন হলো এশা ও ফজরের নামায। (মুসলিম)
➤ আবু মুসলিম (রহঃ) বলেন, আমি হযরত আবূ উমামা (রাযিঃ)এর খেদমতে হাজির হলাম। তিনি মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। আমি আরজ করলাম যে, আমার নিকট এক ব্যক্তি আপনার পক্ষ হতে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, আপনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে এই এরশাদ শুনেছেন, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে অতঃপর ফরজ নামায পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার ঐ দিনের ঐ সমস্ত গোনাহ যা চলাফেরার দ্বারা হয়েছে, যা হাতের দ্বারা করেছে, যা কানের দ্বারা হয়েছে, যা চক্ষু দ্বারা করেছে এবং ঐ সমস্ত গোনাহ যেগুলির খেয়াল তার অন্তরে পয়দা হয়েছে সবই মাফ করে দেন? হযরত আবূ উমামা (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, আমি এই কথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে কয়েক বার শুনেছি। (তারগীবঃ আহমদ)
➤ হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার এরশাদ করলেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির দরজার সামনে একটা নহর প্রবাহিত হতে থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কি কোন ময়লা বাকী থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম (রাযিঃ) আরজ করলেন, কিছুই বাকী থাকবে না। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অবস্থাও এরূপ যে, আল্লাহ জাল্লা শানুহ্ উহার বদৌলতে গোনাহগুলো মিটিয়ে দেন। (তারগীবঃ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)
➤ হযরত আবূ যর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার শীতকালে হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহিরে তাশরীফ আনলেন, তখন গাছ হতে পাতা ঝরে পড়তেছিল। তিনি গাছের একটি ডাল ধরলেন, ফলে তার পাতা আরও বেশী করে ঝরতে লাগলো। তিনি বললেন, হে আবূ যর! মুসলমান বান্দা যখন এখলাসের সাথে আল্লাহর জন্য নামায পড়ে তখন তার গোনাহসমূহ এমনভাবে ঝরে যায় যেমন এই গাছের পাতা ঝরে পড়তেছে। (তারগীবঃ আহমদ)
আরও পড়ুন: সানজিদা নামের অর্থ কি