বাংলাদেশে সম্ভবত খুব কম মানুষই আছেন যারা ছারপোকার নাম জানেন না বা শোনেননি। ছারপোকা একটি বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক প্রাণী । ঘরে আক্রমন করলে অশান্তির শেষ নেই। কারণ এই পোকা রক্ত খায় এবং এই ছোট ছোট পোকাগুলো আপনার চোখের ঘুম কেড়ে নেবে। যদিও বিছানার নিচে এই পোকা বাস করে, তবে মশারি, বালিশ, কাথা এমনকি ট্রেন বা বাসের আসনেও এদের দেখা যায়।
বিছানা, বালিশ বা সোফায় ছারপোকার প্রবণতা বেশি। সম্পূর্ণ নিশাচর না হলেও, এই পোকা সাধারণত রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং চুপিচুপি মানুষের রক্ত চুষে খায়। তার মানে এই নয় যে এটি দিনের বেলায় কামড়াবে না। এটি আপনাকে দিনের বেলায়ও কামড়াতে পারে।
তবে রাতে এই পোকার আক্রমন বেশি হয়ে থাকে। এই পোকা মশার মত কামড় দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ছারপোকার কামড়ে জ্বালাতন, ব্যথা এবং অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে, যা মারাত্মক হতে পারে। অতএব, যত দ্রুত সম্ভব বিছানাকে ছারপোকা মুক্ত করা প্রয়োজন।
সম্ভবত এমন কেউ নেই, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রী বা মেসবাসী, যারা ছারপোকার জালায় অতিষ্ঠ হয়নি।এটি তাড়াতে অনেকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে।
কিন্তু তারপরও অনেক সময় দেখা যায় যে, এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু আপনি কি জানেন যে আপনি প্রাকৃতিকভাবে বিছানা থেকে চিরতরে ছারপোকা তাড়াতে পারেন? হ্যাঁ এটা সম্ভব, এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি বা একাধিক ব্যবহার করতে হবে।
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় অনেক রয়েছে। ছারপোকা তাড়ানোর উপায় সমূহ একে একে তুলে ধরা হবে। আজকে দেখাবো ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে ছারপোকা তাড়ানো যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এই বিরক্তিকর ছারপোকা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
কেরোসিনের ব্যবহার
মাঝে মাঝে বিছানার ছারপোকা তাড়ানোর জন্য আসবাবপত্রগুলিতে কেরোসিন প্রয়োগ করুন। ছারপোকা সহজে পালিয়ে যাবে।
ন্যাপথলিন এর ব্যবহার
ঘরের পোকামাকড় দূর করতে ন্যাপথালিন খুবই কার্যকর। ছারপোকা তাড়ানোর জন্য, বিছানায় মাসে অন্তত দুবার নেফথালিন পাউডার করে ছিটিয়ে দিন। দেখবেন ঘরে কোন ছারপোকা থাকবে না।
বিছানা পরিষ্কার রাখুন
সপ্তাহে অন্তত একবার পুরো ঘর পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। পোকাগুলি প্রায় ১১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মারা যায়। যদি ঘরে ছারপোকার উপদ্রব বেশি থাকে, তাহলে সেখানকার বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা এবং কাপড় সেদ্ধ করে ধুয়ে ফেলুন । এতে পোকা মারা যাবে।আর অবশ্যই বিছানা দেয়াল থেকে দূরে রাখুন।
আসবাবপত্র রোদে দিন
কিছুদিন পরপর আসবাবপত্র, বিছানাপত্র ও লেপ তোষক ভালোভাবে রোদ লাগান। তাহলে বিছানাপত্রের স্যাঁতসেঁতেভাব চলে যাবে এবং পোকাগুলো মারা যাবে। এতেকরে সহজে ছারপোকা হবে না।
ছারপোকা দমনের ঔষধ
ছারপোকা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হল প্রাকৃতিক কীটনাশকের ব্যবহার। এক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক হলো ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ (Diatomaceous earth)। অনেক ছারপোকা কন্ট্রোল কোম্পানিও এটি ব্যবহার করে। অতএব, বিছানা, ঘরের কোণ, সোফা ইত্যাদির মতো যেখানে ছারপোকা আছে, সেখানে খুব পাতলাভাবে ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ ছিটিয়ে দিন। টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, যখন ছারপোকাগুলো ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ এর সংস্পর্শে আসে, তখন তার রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে পোকাগুলো শুকিয়ে যায় এবং মারা যায়।
ছারপোকা তাড়াতে পুদিনা পাতার ব্যবহার
অনেকেই জানেন না যে ছারপোকা পুদিনা পাতার গন্ধ সহ্য করতে পারে না। তাই আপনি বিছানার নিচে পুদিনা পাতা রাখতে পারেন ছারপোকা থেকে রক্ষা পেতে। এক্ষেত্রে শুকনো পুদিনা পাতাও কাজে লাগবে। আপনি বাড়ির প্রতিটি কোণে আপনার সোফার পাশে পুদিনা পাতা রাখতে পারেন। এজন্য বিশেষজ্ঞরা ভ্রমণ বা পর্যটনের সময় বিছানায় শুকনো পুদিনা পাতা রাখার পরামর্শ দেন।
ছারপোকা কেন হয়
ছারপোকা গরম সহ্য করতে পারেনা। ৩০ ডিগ্রির অধিক তাপমাত্রা ছারপোকা সহ্য করতে পারে না। যেসব রুম স্যাঁতসেঁতে থাকে, সে সব রুমে ছারপোকা জন্মায় বেশি। ভেজা ও আদ্র পরিবেশে ছারপোকা জন্মায়। তাই এক দুই মাস পর পর তোষক, বালিশের কভার, চাদর রোদে দিন এবং রুমে পর্যপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন। বিছানার তোষক দেয়াল থেকে দূরে রাখুন, নাহয় ছারপোকা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আরও পড়ুন: মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে কিছু ঘরোয়া কার্যকরী উপায়
রেফারেন্স:
দৈনিক যুগান্তর